চলছে গরমের সিজন । এই গরমে বাইরে বের হলেই ঘাম, রোদের প্রখর তাপ, ধূলাবালি এসবের সমস্যা এড়ানো যায় না । এসবের ইফেক্ট সরাসরি সবচেয়ে বেশি পরে আমাদের ত্বকে, বিশেষ করে মুখের ত্বক সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় । তাই এ সময়ে শুধু ক্লিনজিং টোনিং এবং ময়েশ্চারাইজিং স্টেপ ফলো করে স্কিনের যে ক্ষতি হয় তা সামাল দেওয়া যায় না । এছাড়া দরকার কিছু বাড়তি যত্ন । রেগুলার রুটিনের সাথে কিছু বাড়তি স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চললে আমরা সহজেই গরমের দিনেও সতেজ উজ্জ্বল স্কিন পেতে পারি । গরমেও কিভাবে ফ্রেশ উজ্জ্বল স্কিন পেতে পারি তা নিয়েই আজ আমরা আলোচনা করব ! 

মেকআপ রিমুভ – বাইরে থেকে বাসায় ফিরে ভাল ভাবে মুখ পরিষ্কার করে মেকআপ তুলুন । কখনোই মুখে মেকআপ নিয়ে ঘুমাবেন না । অনেক সময় ক্লান্তিতে আমরা আলসেমি করে মেকআপ না তুলেই ঘুমিয়ে যাই । এতে করে মেকআপ প্রোডাক্টে ব্যবহার করা বিভিন্ন উপাদানের সাথে সাথে সারাদিনের ধূলাবালি ময়লা স্কিনে বসে যায়, যার কারনে পোরস ব্লক হয়ে যায় এবং ব্রন উঠতে শুরু করে । কাজেই কখনই বাসায় এসে মুখে মেকআপ রাখা যাবে না । ভালভাবে মুখ ডিপলি পরিষ্কার করতে হবে। 

ফেস স্টিম – ফেস নিয়মিত ভাল ভাবে পরিষ্কার করার পাশাপাশি ফেস স্টিম নেওয়া উচিত । এতে করে স্কিনের গভীরে থাকা ডাস্ট, ডেডসেল পরিষ্কার করতে সাহায্য করে, যার কারনে পোরস ব্লকের ভয় থাকে না । সেই সাথে ফেস স্টিমিং ত্বকে হাইড্রেশন দেয়, ত্বকে জেল্লা ফিরিয়ে আনে । এছাড়া ফেইস স্টিমিং স্কিনে ইলাস্টিন ও কোলাজেনের মাত্রা বাড়ায়, যার কারনে এটি এন্টি এজিংয়ের কাজও  করে ।  

সানস্ক্রিন – গরমে সবথেকে বেশি জরুরী সানস্ক্রিন । সানস্ক্রিন ছাড়া বাইরে যাওয়া যাবে না, কারন সূর্যের ক্ষতিকর UVA ও UVB রশ্মি আমাদের ত্বকের প্রচুর ক্ষতি করে, সেই সাথে সানবার্ণ তো আছেই । সুতরাং স্কিন টাইপ অনুযায়ী অন্তত এসপিএফ ৫০ আছে এমন সানস্ক্রিন ইউজ করতে হবে । বাইরের যাওয়ার অন্তত ২০ মিনিট আগে হাত, পা, ঘাড়, গলা, মুখে ভালভাবে সানস্ক্রিন লাগাতে হবে । 

টমেটো – সানবার্ণ দূর করতে টমেটোর জুড়ি মেলা ভার । টমেটো ন্যাচারাল ব্লিচের কাজ ও করে । টমেটোতে আছে পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি, যা উজ্জ্বল ত্বক পেতে সাহায্য করে । টমেটোতে লাইসোপিন নামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকে, যা ত্বকের বিভিন্ন দাগ, বলিরেখা ও শুষ্কভাব দূর করে ত্বক মসৃণ করে । রোজ বাইরে থেকে আসার পর একটি টমেটোর রস মুখে, ঘাড়ে, গলায়, হাতে , পায়ে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন, এতে করে সানবার্ণ কমে যাবে আর ত্বক ও উজ্জ্বল, হেলদি হবে । 

অলিভ অয়েল – ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল খুবই কার্যকরী । অলিভ অয়েলের মাধ্যমে খুব গভীরভাবে পরিষ্কার করা ছাড়াও হাতের আঙুলের মাথায় কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল নিয়ে চোখের চারপাশে আলতো ভাবে রোজ ম্যাসাজ করুন । এটা ডার্ক সার্কেল ও রিংকেলের প্রব্লেম কমাতে হেল্প করে । এছাড়াও অলিভ অয়েল ত্বককে নরম করে, মসৃণ ও উজ্জ্বল করে তোলে । 

এক্সফোলিয়েশন – ত্বকের ডেডসেল তুলে ফেলতে নিয়মিত স্কিন এক্সফোলিয়েশন করা অবশ্যই দরকার । এক্সফোলিয়েশন স্ক্র্যাব দোকান থেকেও কিনতে পারেন আবার নিজেও বানিয়ে নিতে পারেন । এক চামচ টকদই অথবা মধুর সাথে এক চামচ বেসন নিন, সাথে আধ চামচ যষ্ঠিমধুর গুড়ো ব্যবহার করুন । ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে  শুকিয়ে গেলে সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করে মুখ ধুয়ে ফেলুন । এই প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহার করলে স্কিনের ডাস্ট, ডেডসেলস যেমন ক্লিন হবে তেমন স্কিন উজ্জ্বল করতেও সহায়তা করবে । টকদই স্কিন গ্লোয়িংয়ে হেল্প করে । 

শাক সবজি ও জল - শুধু ত্বক পরিষ্কার করলেই হবেনা, সেই সাথে প্রতিদিন সুষম পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হবে । প্রতিদিন কমপক্ষে ২ লিটার (৮ গ্লাস) জল খাওয়া উচিত । জল আমাদের শরীর থেকে টক্সিন দূর করে, স্কিনকে হাইড্রেশন দেয় । তরমুজ, শসা ইত্যাদি রসালো ফল খান । স্ট্রবেরি, কমলালেবু, শসার নির্যাস আছে এমন শরবত পান করুন রোজ । 

বিউটি স্লিপ – ফ্রেশ, গ্লোয়িং, তরতাজা ত্বক পেতে অবশ্যই বিউটি স্লিপের দিকে নজর রাখতে হবে । প্রতিদিন অন্তত কমপক্ষে ৮ ঘন্টার প্রোপার ঘুম জরুরী । ঠিকমত না ঘুমালে ত্বকে ক্লান্তির ছাপ পরে যায়, ডার্ক সার্কেল বাড়ে । আর সারাদিনে স্কিনের যত ক্ষতি হয় আমাদের শরীর ঘুমের সময়ে সেই সমস্ত ক্ষতি সারিয়ে তোলার কাজ করে প্রাকৃতিকভাবে । কাজেই পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই ।  

সতেজ, তরতাজা, সুস্থ ত্বক পেতে আমাদের ক্লিনজিং টোনিং ময়েশ্চারাইজিং রুটিনের পাশাপাশি এসব স্টেপ ও ফলো করতে হবে । সেই সাথে প্রচুর পরিমানে জল খান, শাকসবজি খান, রোজ হালকা ব্যায়াম করুন, এতে করে শরীর মন দুইই ভাল থাকে, সেই সাথে ত্বক ও ভাল রাখে ।