কৈশোরের মত সতেজ কোমল ত্বক সারা জীবনই কে না চায়? কৈশোরে আমাদের ত্বক কোমল থাকে, সতেজ থাকে, কিন্তু যত বয়স বাড়তে থাকে আমাদের স্কিনে বয়সের ছাপ ও পরতে শুরু করে । স্কিন বুড়িয়ে যেতে শুরু করে, কিন্তু আমরা প্রত্যেকেই চাই আমাদের তারুণ্য,স্কিনের লাবন্য, সতেজতা সব সময়েই একই থাকুক কিন্তু সুন্দর থাকতে চাইলে যেহেতু বয়স বাড়া আমরা আটকাতে পারব না, কিন্তু চাইলে অ্যান্টি এজিং প্রসেসকে আমরা ধীরগতিতে পরিবর্তন করতে পারব । কাজেই যত দ্রুত আমরা স্কিন কেয়ারের দিকে নজর দেব তত বেশি সময় ধরে আমাদের স্কিনে তারুণ্য বজায় থাকবে । 

বয়স নির্বিশেষে যাঁরা নিজেদের সুন্দর করে রাখতে চান, তাঁদের কাছে অ্যান্টি-এজিং একটা চিন্তার বিষয়। আজকাল সব বয়সের মানুষই বিভিন্ন এস্থেটিক ক্লিনিকে যান এবং যে সব প্রশ্ন তারা জানতে চান তার ভেতর সবচেয়ে বেশি হল  "অ্যান্টি-অ্যাজিং স্কিন কেয়ার শুরু করার সঠিক বয়স কোনটা!

অ্যান্টি এজিং স্কিন কেয়ার রুটিন শুরু করার আদর্শ সময় কোনটা?

সাধারণত ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়স অব্ধি আমাদের স্কিনের জন্য বেস্ট  সময়, এই বয়সটাতে নরমাল ব্রনের সমস্যা ছাড়া আর তেমন কোন সমস্যা দেখা দেয় না । কিন্তু ২৫ এর পর আমাদের ত্বকের কোলাজেনের ইলাস্ট্রিনের পরিমান কমতে থাকে যার কারনে বয়সের ছাপ পরতে শুরু করে । এজন্য ২৫ বছর বয়সকে অ্যান্টি এজিং স্কিন কেয়ার রুটিন শুরু করাকে আদর্শ সময় হিসাবে ধরা হয় । ৩৫ বছর বয়স থেকে আমাদের স্কিনে কোলাজেন টিস্যু ও ইলাস্টিন  তৈরীর পরিমান আরো কমতে শুরু করে, কাজেই আপনার বয়স যদি ২৫ হয়ে থাকে এর এখনো অ্যান্টি এজিং স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করতে শুরু না করে থাকেন তাহলে আজ থেকেই শুরু করুন ।  

আদর্শ অ্যান্টি এজিং স্কিন কেয়ার রুটিন –

অ্যান্টি অ্যাজিং স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করার ক্ষেত্রে স্কিন কেয়ারের প্রোপারলি সব স্টেপ ফলো করা ছাড়াও আমাদের স্কিনে কোন কোন ইনগ্রিডিয়েন্টস স্যুট করবে, কোন কোন ইনগ্রিডিয়েন্টস আমাদের এভয়েড করে চলা উচিত, যে প্রোডাক্টগুলি ব্যবহার করছি সেগুলি প্রোপারলি কাজ করবে কিনা এগুলো খেয়াল রাখাও জরুরী । সেই সাথে হেলদি লাইফস্টাইল, ডায়েট, ঠিকমত ঘুম, বিশ্রাম এগুলোও মেইনটেইন করতে হবে । 

ক্লিনজিং এবং স্ক্র্যাবিং 

স্কিন থেকে এক্সট্রা অয়েল, ধূলাবালি, ময়লা এসব দূর করার জন্য রোজ অবশ্যই ভাল মানের ক্লিনজার ইউজ করতে হবে । যেসব ক্লিনজার বা ফেসওয়াশে ন্যাচারাল এক্সট্রাক্ট আছে (টি ট্রি, লেমন, গ্রিন টি, অ্যালোভেরা) ভিটামিন সি এসব আছে এমন ক্লিনজার ইউজ করা উচিত, এগুলোতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা স্কিনে বয়স্ক ভাব আসা থেকে সুরক্ষা দেবে । আর ডেড স্কিন সেল আর ব্ল্যাক হেডস রিমুভের জন্য সপ্তাহে দুইদিন স্ক্রাবিং করবেন। সুদিং আর ময়েশ্চার প্রপারটিজ আছে  এবং বড় বিডস যুক্ত স্ক্রাবার বেছে নিতে পারেন আর হার্শ ফর্মুলার স্ক্রাবার এড়িয়ে চলবেন। 

টোনিং

টোনার আমাদের স্কিন কেয়ারের একটি ইম্পর্ট্যান্ট স্টেপ । টোনার স্কিনের পি এইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখে, রাফনেস রিপেয়ার করে এবং স্কিনের হাইড্রেশন ধরে রাখে । টোনার ইউজের স্টেপ আমরা অনেকেই না বুঝে স্কিপ করে যাই কিন্তু ইয়াংগার লুকিং, হেলদি আর রেডিয়েন্ট স্কিন পেতে টোনার ইউজ করা মাস্ট । 

সিরাম

স্কিন কেয়ারের একটি ইম্পর্ট্যান্ট পার্ট হচ্ছে সিরাম । স্কিনের ময়েশ্চার ব্যালেন্স ঠিক রাখার জন্য রেটিনল (retinol), পেপটাইড সিরাম ( peptide serum), হায়ালুরোনিক এসিড ( hyaluronic acid) ব্যবহার করা যায় । হায়ালুরোনিক এসিড কার্যকরী একটি উপাদান যেটা ময়েশ্চার রিটেইন করে এবং বুড়িয়ে যাওয়া থেকে স্কিনকে রক্ষা করে । ভালো অ্যান্টি এজিং ইনগ্রিডিয়েন্স হচ্ছে ভিটামিন-এ ডেরিভেটিভস (রেটিনোড) এবং ভিটামিন-সি । অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বককে সতেজ রাখে আর ত্বকের ভেতর থেকে কাজ করে হেলদি গ্লো দেয় । পেপটাইড সিরামে স্কিন বেনিফিসিয়াল বিভিন্ন অ্যামাইনো এসিড ( Amino acid) আছে যেটা নারিশমেন্টের পাশাপাশি কোলাজেন প্রোডাকশনেও (Collagen Production) ভুমিকা রাখে । সিরাম ব্যবহার করার সবচেয়ে উপকারী দিক হচ্ছে এটি খুব দ্রুত স্কিনের ভেতর গিয়ে কাজ করতে শুরু করে । কাজেই সিরাম ইউজ করা মাস্ট । 

ময়েশ্চারাইজার 

অ্যান্টি এজিং স্কিন কেয়ার রুটিনে ময়েশ্চারাইজার কোন ভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না ।  বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্কিনে সেবাম প্রোডাকশন কমে যায় যার কারন স্কিন ড্রাই হয়ে যায় দ্রুত । ডিহাইড্রেট স্কিনে ফাইন লাইন পরা, রিংকেল পরা, ডার্ক সার্কেল সহ নানা প্রব্লেম শুরু হয় । ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই ,শিয়া বাটার, রেটিনল, অ্যালোভেরা, মধু, জোজোবা অয়েল এসবের এক্সট্রাক্টযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ইউজ করা উচিত, এতে করে স্কিনের হাইড্রেশন বজায় থাকার পাশাপাশি স্কিনে রেডিয়েন্ট বাড়াবে, গ্লোয়ি করবে, হেলদি করে তুলবে । 

সানস্ক্রিন  

সানস্ক্রিন স্কিন কেয়ারের মাস্ট ইম্পর্ট্যান্ট পার্ট । সূর্যের ক্ষতিকর UVA ও UVB রশ্মি আমাদের স্কিনের যে কত ক্ষতি করে তা ধারনার বাইরে । শুধু যে সানবার্ণ তৈরী করে তা না, এটি প্রিম্যাচিউর অ্যান্টি এজিং এর অন্যতম একটি কারন । সূর্যরশ্মির প্রভাবে স্কিনের কোলাজেন ভেঙ্গে যায়, যেটা ইলাস্টিনে প্রভাব ফেলে চামড়া পাতলা আর ড্রাই করে দেয়। স্কিনের ধরন অনুযায়ী এখন বিভিন্ন ফর্মে (জেল, পাউডার, ক্রিম, লোশন) এখন সানস্ক্রিন পাওয়া যায়। তবে অবশ্যই সব সময় প্যারাবেন ফ্রি সানস্ক্রিন ইউজ করবেন । 

এছাড়াও ন্যাচারাল কিছু ফেস মাস্ক ইউজ করেও স্কিনের কেয়ার নেওয়া যায় যেগুলো অ্যান্টি এজিং কে দূরে রাখতে হেল্প করে, এর পাশাপাশি শিট মাস্ক ইউজ করতে পারেন । শিট মাস্ক স্কিনে এক্সট্রা হাইড্রেশন প্রোভাইড করে । বিশেষত রাতে ঘুমানোর আগে শিট মাস্ক ইউজের পর স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করলে সারা রাত স্কিন আরো বেশি নারিশড রাখে ।

স্কিনের তারুণ্য ধরে রাখতে আসলে খুব বেশি কিছুর দরকার হয় না । সঠিক সময় থেকে প্রোপার যত্ন, সিম্পল কিছু প্রোডাক্ট আর হেলদি ডায়েট ফলো করলে সহজেই আমরা অ্যান্টি এজিং প্রব্লেম থেকে দূরে থাকতে পারি । বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্কিনের তারুণ্য হারানোর ভয় না করে বরং সঠিক বয়স থেকে অ্যান্টি এজিং স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করে স্বাভাবিকের থেকে দশ বছর বেশি সময় আমরা সুন্দর স্কিন পেতে পারি । সেই সাথে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন, নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন আর প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান।