সুন্দর মসৃণ ত্বকে যদি হঠাৎ কখনো দেখেন ছোট ছোট কিছু গর্ত বা ছিদ্র, অথচ বুঝতেই পারছেন না এগুলি কি, কেন হচ্ছে !  ত্বকের অনেক সমস্যার ভেতর একটি সমস্যা হচ্ছে পোরসের সমস্যা । অনেকেই এটাও জানেনা যে পোরস বড় হয়ে যাওয়া একটি স্কিনের সমস্যা । পোরস বড় হতে হতে একটা সময়ে এটা খুব বিব্রতকর অবস্থায় চলে যায় । অনেকেই এই পোরস কি, এই পোরস সমস্যা কেন হয়, এই সমস্যার সমাধান কি সেটা জানতে চান, সুতরাং পোরস কি, কিভাবে পোরসের যত্ন নেওয়া উচিত, কি করলে পোরস সাধারন অবস্থায় থাকবে সে ব্যাপারে ভাল ভাবে জানা উচিত । চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক –

পোরস কি ?

আমাদের ত্বকের সারফেসে কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে । এগুলিকেই ইংরেজিতে পোরস বলা হয় । পোর শব্দটির অর্থ হচ্ছে রোমকূপ । আমাদের সবার ত্বকেই পোরস থাকে জন্মগতভাবে, পোরস এত ছোট ছোট হয়ে থাকে যে দেখতে পাওয়ার কথা না । কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন কারনে পোরস আস্তে আস্তে বড় হতে শুরু করে, বিশেষ করে নাকের উপর, নাকের চারপাশের এরিয়ায়, গালে বেশি দেখা যায় তখনি আমরা বলি যে ওপেন পোরসের সমস্যা হয়েছে ।  

চলুন জেনে নেই পোরসের কাজ কি ?

১) পোরসের প্রধান কাজ হল আমাদের ত্বকের ঘাম, তেল এগুলি বের করা । 

২) পোরস ত্বকের শ্বাসপ্রশ্বাসে সাহায্য করে ।

৩) ত্বকের জলীয় ভাব ধরে রাখে । 

৪) ত্বককে ঠান্ডা রাখে ।

৫) ত্বকের ময়েশ্চার লেভেল ব্যালেন্স করা । 

পোরস কেন বড় হয় ?

সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্কিনের ইলাস্টিন ও কোলাজেন লুজ হতে শুরু করে, তখনই ত্বকের পোরস চোখে পড়ে। এছাড়া সান ড্যামেজ, ব্ল্যাকহেডস, অতিরিক্ত অয়েলি স্কিন, হরমোনাল ইস্যু, স্কিন কেয়ার না করা এসব কারণে ওপেন পোরসের সমস্যা দেখা দিতে পারে । তাই আমাদের সব সময় সতর্ক হওয়া প্রয়োজন কারন ত্বক যত টানটান হবে, সারফেসের ছিদ্র তত ছোট থাকবে ।

পোরস ত্বক থেকে পুরোপুরি দূর করা তো সম্ভব না, কিন্তু পোরস বড় হয়ে যাওয়ার যে সমস্যা সেই সমস্যার কিছু সমাধান আছে । সঠিক ভাবে স্কিন কেয়ার করে আমরা এই প্রব্লেম থেকে মুক্তি পেতে পারি । এসব ক্ষেত্রে ন্যাচারাল ইনগ্রিয়েন্টস ইউজ করা সবচেয়ে ভাল, এতে স্কিনে কেমিক্যাল প্রোডাক্টের ইফেক্ট পরে কম । 

চলুন জেনে নেই কিভাবে ন্যাচারালি স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করলে ওপেন পোরস সমস্যাকে দূর করা যায়?

অ্যালোভেরা জেল – অ্যালোভেরা জেল প্রাকৃতিক উপাদানের ভেতর সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখে । সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ডাবল ক্লিনজিং এর পর ফেশ অ্যালোভেরা জেল মুখে ম্যাসাজ করে দশ মিনিট রেখে দিন, এটা স্কিনকে হাইড্রেট করার পাশাপাশি পোরসের আকার ছোট করতে হেল্প করে ।  

ডিমের সাদা অংশের মাস্ক – ডিমের সাদা অংশের সাথে সামান্য ওটমিলের গুড়ো এবং সামান্য লেবুর রস মিলিয়ে প্যাক বানিয়ে মুখে লাগান নিয়মিত, এটা স্কিনকে টানটান করতে হেল্প করে ।

বেসন, টকদই  ও হলুদ – এক চামচ পরিমান বেসনের সাথে এক চামচ পরিমান টকদই এবং এক চিমটি হলুদগুড়া একত্রে ভালভাবে মিশিয়ে মুখে লাগান । শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন । কিছুদিনের ভেতর পোরস ছোট হয়ে যাবে এবং ত্বকের হারানো জেল্লা ফিরে আসবে ।  

অ্যাপল সাইডার ভিনেগার – ১:১ পরিমাণ অ্যাপল সাইডার ভিনেগারের সাথে এক চামচ পরিমাণ পানি মিশিয়ে নিন । তারপর একটি তুলোর বলের মাধ্যমে মুখে লাগান মিশ্রণটি । শুকোতে দিন মিশ্রণটি, নিয়মিত এটি টোনার হিসাবে ইউজ করলে ওপেন পোরসের সমস্যা কমে যাবে । 

বরফ – শুনতে অবাক লাগলেও বরফ পোরসের প্রব্লেম কমাতে অনেক হেল্প করে । এক টুকরো আইসকিউব পরিষ্কার সুতির কাপড়ে কভার করে রোজ পুরো স্কিনে আলতো ভাবে ম্যাসাজ করুন । বরফ স্কিনকে টানটান করে, স্কিনে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যার ফলে ওপেন পোরসের সমস্যা কমায় । 

আলু আলু ঘষে আলুর রস স্কিনে লাগান । ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন । চাইলে আলু ব্লেন্ড করে আইসকিউব বানিয়েও ব্যবহার করতে পারেন । আলু স্কিনের পোরস কমাতে খুবই হেল্প করে, পাশাপাশি এটি ডার্ক সার্কেল, একনে মার্কস দূর করে । ঘরোয়া টোটকাগুলি তো জানলাম । এছাড়াও কিছু জিনিস মেনে করলে ওপেন পোরসের সমস্যা থেকে ত্বককে দূরে রাখা যায় । আমাদের সকলের স্কিন টাইপ এক হয় না । তাই স্কিন অনুযায়ী সবার স্কিন কেয়ার রুটিন ও আলাদা হয় ।  

এখন আমরা জানব বেসিক কিছু স্কিন কেয়ার রুটিন সম্পর্কে –  

সানস্ক্রিন – আমরা যে ভুলটা সব থেকে বেশি করি সেটা হচ্ছে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করিনা ঠিক মত । কিন্তু আমাদের উচিত নিয়মিত সানস্ক্রিন ইউজ করা, কয়েক ঘন্টা অন্তর সানস্ক্রিন রিঅ্যাপ্লাই করা । রোজ অন্তত spf 50 আছে এমন সানস্ক্রিন ব্যবহার করা । 

সিরাম – আপনার ত্বকের ধরণ অনুযায়ী সিরাম বেছে নিন । সিরাম ব্যবহারের সবথেকে উপকারী দিক হচ্ছে সিরাম স্কিনের ভেতর তিনটি লেয়ার পর্যন্ত পৌঁছে দ্রুত কাজ করে । 

ডাবল ক্লিনজিং – ডাবল ক্লিনজিং এর জন্য ফোমিং ফেসওয়াশ ব্যবহার করা ভাল । ডাবল ক্লিনজিং করলে স্কিনের ভেতরের পোরস পুরোপুরি ক্লিন থাকে, ফলে পোরস ছোট থাকার পাশাপাশি স্কিনে ব্রনের সমস্যাও কমে । 

টোনিং -  টোনিং করলে ত্বকের পি এইচ ব্যালেন্স ঠিক থাকে, পোরস টাইটেনিং হয় । তাই টোনার বাদ দেওয়া যাবে না। 

এর পাশাপাশি হেলদি ডায়েট ফলো করবেন, নিয়মিত ৮ ঘণ্টা ঘুম, সামান্য এক্সারসাইজ, ফলমুল খাবেন, এতে করে স্কিন তার প্রয়োজনীয় ভিটামিন, পুষ্টি পাবে এবং স্কিনের সমস্যাগুলি দূরে রাখবে । সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, সুন্দর থাকবেন ।