ত্বক কী? 

মেডিকেল সাইন্সের সাহায্যে বলা যেতে পারে যে ত্বক হল শরীরের বৃহত্তম বাইরের স্তর বা অঙ্গ যা সমগ্র মানবদেহকে আবৃত করে এবং তাপ, আলো, আঘাত এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।এটি  শরীরের তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে। এটি আপনাকে স্পর্শ, তাপ এবং ঠান্ডা অনুভূতি অনুভব করতে সহায়তা করে।

ত্বক ৩টি স্তর দিয়ে তৈরিঃ

১. এপিডার্মিস হল বাইরের স্তর যা জলরোধে বাধা প্রদান করে এবং আপনার ত্বকের টোন তৈরি করে।

২. এপিডার্মিস স্তরের নীচে থাকে ডার্মিস যাতে শক্ত সংযোগকারী টিস্যু, চুলের ফলিকল এবং ঘাম গ্রন্থি থাকে।

৩. সবশেষে গভীর ত্বকনিম্নস্থ টিস্যু হাইপোডার্মিস চর্বি এবং সংযোগকারী টিস্যু দিয়ে তৈরি। 

 মেলানোসাইটস হল একটি  বিশেষ কোষ যা প্রিগমেন্ট মেলানিন তৈরি করে যার কারনে ত্বকের রঙ ভিন্ন হয়।মেলানোসাইটগুলি এপিডার্মিসে স্থাপন করা হয়।

ত্বকের কার্যক্রমঃ

  • শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে  
  • পানি এবং চর্বি  সঞ্চয় করে
  • একটি সংবেদনশীল অঙ্গ 
  • পানি হ্রাস হওয়া প্রতিরোধ করে 
  • ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ প্রতিরোধ করে 
  • জীব এবং পরিবেশের মধ্যে একটি বাঁধা হিসেবে কাজ করে 
  • যখন সূর্যের সংস্পর্শে আসে ভিটামিন ডি তৈরিতে সাহায্য করে 

ত্বকের প্রকারভেদঃ

ত্বক মূলত ৫ প্রকার হয়।  

  • নরমাল ত্বক
  • সেন্সেটিভ ত্বক 
  • মিশ্র ত্বক 
  • শুষ্ক ত্বক
  • তৈলাক্ত ত্বক

নরমাল ত্বক 

নরমাল ত্বক বলতে ভালো ভারসাম্যপূর্ন ত্বককে বুঝানো হয়। এই ধরনের ত্বকের বৈজ্ঞানিক পরিভাষা হল ইউডার্মিক। 

নরমাল ত্বক সনাক্ত করব কিভাবে?

  • সূক্ষ্ম পোরস 
  • ভালো রক্ত সঞ্চালন 
  • একটি কোমল,স্ফট এবং মসৃন টেক্সচার 
  • ফ্রেশ,গোলাপী রঙের ইউনিফর্মযুক্ত স্বচ্ছতার মতো 
  • কোনো দাগ নেই 
  • সেন্সেটিভিটি প্রবন নয় 
  • কিন্তু সময়ের সাথে সাথে নরমাল স্কিন ড্রাই হয়ে যেতে পারে।

সেনসেটিভ ত্বক

সেনসেটিভ ত্বক অনেক সংবেদনশীল হয় যা স্কিনে ইচিনেস, বিভিন্ন এলার্জি বা র্যাশ এর জন্ম দেয়।

সেনসেটিভ ত্বক শনাক্ত করব কিভাবে? 

ত্বকে কোনো প্রকার  প্রসাধনী বা কসমেটিক্স ব্যবহার করার ফলে ত্বকে র‍্যাশ, লালচেভাব ও বার্ন হয়ে যায় । আর ত্বকে এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকলে ত্বককে সেন্সেটিভ বা সংবেদনশীল ত্বক শনাক্ত করা হয়। ত্বকের এই সমস্যাগুলো খুব সহজে উত্তেজিত হয় এবং যা ত্বকে হালকা থেকে খুব গভীর আকার ধারণ করে ।

নিম্নলিখিত কারন গুলোও সেনসেটিভ ত্বকের উপর্সগ হিসেবে ধরা যায়ঃ 
  • যদি কোনো ধরণের কসমেটিক বা এক্টিভ ইনগ্রিডিয়েন্টস এ ত্বক খুব সেনসেটিভ ও এলার্জি থাকে।
  • ত্বকের যত্ন নেওয়ার সময় যদি কোন উপকরণ  রিঅ্যাাকশন সৃষ্টি করে।
  • সেন্সেটিভ ত্বকে এর জন্য প্যাচ টেস্ট  করে সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে।

মিশ্র ত্বক

মিশ্র ত্বক হল মিশ্র গঠিত ত্বককে বোঝায়।

মিশ্র ত্বক শনাক্ত করব কিভাবে? 

  • টি-জোন এরিয়া অয়েলি হয়ে থাকে(কপাল,থুতনি এবং নাক)
  • এই এরিয়াতে পোরসের আকার বড় হয় এবং কিছু ইম্পিউরিটিস থাকে 
  • গালের অংশ নরমাল থেকে ড্রাই হতে পারে

শুষ্ক ত্বক

এটি এমন ধরনের ত্বক যা নরমাল ত্বকের তুলনায় কম সিবাম প্রোডিউস করে ।সিবামের এই ঘাটতির কারনে শুষ্ক ত্বকে আদ্রর্তার পরিমান কমে যায় যে কারনে এটি ন্যাচারাল ময়েশ্চার ফিরে পাওয়া প্রয়োজন।

শুষ্ক ত্বক সনাক্ত করব কিভাবে? 

শুষ্ক ত্বকের ৩টি স্তর রয়েছে 

হাল্কা শুষ্ক ত্বক

এই স্তরে আপনার ত্বক অনেক টানটান,রুক্ষ এবং নিস্তেজ দেখায়। স্কিনের ইলাস্টিসিটির পরিমান কমে যায়। 

অনেক শুষ্ক ত্বক

যদি প্রথম স্তরের ত্বকের শুষ্কতার ট্রিটমেন্ট না করা হয় তাহলে এই সমস্যা বাড়বে। 

  • মাইল্ড স্কেলিং,ফ্ল্যাকিনেস ও প্যাচেস দেখা দেয়  
  • স্কিন রাফ এবং দাগযুক্ত হয় 
  • স্কিন অনেক বেশি টানটান লাগে 
  • চুলকানি হতে পারে 

এটি আরো সেনসেটিভ ফলেইরিটেশন,রেডনেস এবং ইনফেকশন এর সমস্যা বাড়তে পারে।

অত্যন্ত শুষ্ক ত্বক

শরীরের কিছু নির্দিষ্ট অংশ যেমন –হাত,পা,কনুই এবং হাঁটু অনেক বেশি শুষ্ক হয়ঃ 

  • রাফনেস 
  • কলাস 
  • স্ক্যালিং 
  • ঘন ঘন চুলকানি 
  • বয়স্ক বা ডিহাইড্রেটেড স্কিনে অনেক ড্রাই ভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। 

তৈলাক্ত  ত্বক

এই ধরনের স্কিনটোনে সবচেয়ে বেশি সিবাম প্রোডাকশন হয়ে থাকে।আর এই ওভার প্রোডাকশন সেবোরিয়া নামে পরিচিত। 

সিবামের এই ওভার প্রোডাকশন এর জন্য অনেকগুলো কারন রয়েছেঃ 

  • জেনেটিক্স 
  • হরমোনের পরিবর্তন এবং ভারসাম্যহীনতা
  • মেডিকেশন
  • মানসিক চাপ
  • কমেডোজেনিক কসমেটিক (মেকআপ প্রোডাক্ট এর কারনে ইরিটেশন হয়) 

তৈলাক্ত  ত্বক শনাক্ত করব কিভাবে? 

  • পোরসের আকার বড় ও দৃশ্যমান হয় 
  • স্কিন দেখতে তেলতেলে লাগে
  • স্কিন ফ্যাকাশে ও মোটা হয়ঃ রক্তনালীগুলো দৃশ্যমান হয় না 
  • অয়েলি স্কিন একনি,রেডনেস এবং ইচিনেস এর জন্য পারফেক্ট পরিবেশ তৈরি করে।

তাছাড়া একজন ভালো ডার্মাটোলোজিস্ট  বা ফার্মাসিস্ট এর কাছে গিয়েও স্কিন টাইপ কেমন জানতে পারেন। 

  • এজিং সাইন 
  • স্কিন কালার 
  • সিবাম এবং ঘামগ্রন্থি 
  • ন্যচারাল ময়েশ্চারাইজ প্রোডাকশন